বহুতল ভবনের ফ্ল্যাটে বাস করা ধনাঢ্য এক নারী যখন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন তখন আশপাশের কেউ এগিয়ে আসেননি। খবর পেয়ে ওই নারীর মরদেহ গোসল করাতে যান রোজিনা আক্তার। কিন্তু ভবনের নিচে গোসলে বাধা দেয় লোকজন। পরে ওই নারীর ফ্ল্যাটের ভেতরে তাকে গোসল করান তিনি।
৫১ বছর বয়সী রোজিনা আক্তার নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার এনায়েতনগর ইউনিয়ন পরিষদের ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য।
করোনা মহামারির শুরু থেকেই তিনি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া নারীদের গোসল করাতে শুরু করেন। তাদের দাফনের জন্য কবরের মাটি খোঁড়ারও একটি দল গড়ে তুলেছেন এই ইউপি সদস্য। এ পর্যন্ত করোনায় মারা যাওয়া ৫০ জন নারীকে গোসল করিয়েছেন তিনি।
এর আগে করোনায় মৃতদের গোসল-দাফনের কাজ করে দেশজুড়ে আলোচনায় আসেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর কাউন্সিলর মাকসুদুল আলস খন্দকার খোরশেদ। তিনি বলেন, ‘ইউপি সদস্য রোজিনা করোনায় মারা যাওয়া ৫০ জন নারীকে গোসল করিয়েছেন। পাশাপাশি তার ইউনিয়ন এলাকার টিম আমাদেরকে অনেক দাফনে সহযোগিতা করেছে।’
রোজিনার সাহসের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘তার মতো সাহসী নারী জনপ্রতিনিধি এ এলাকায় নেই। আম্পান ঘূর্ণিঝড়ের সময়ে রাত আড়াইটা পর্যন্ত ফতুল্লা এলাকার এক নারীর গোসলে ব্যস্ত ছিলেন রোজিনা। আম্পানের আরেক রাতে মাসদাইর কবরস্থানে সারা রাত ছিলেন তিনি।’
খন্দকার খোরশেদ আরও জানান, নারায়ণগঞ্জের পাশাপাশি ঢাকা ও গাজীপুরে গিয়েও করোনায় মৃত নারীদের গোসল-দাফনের ব্যবস্থা করেছেন রোজিনা।
ঝুঁকি জেনেও কেন এমন কাজে এগিয়ে এলেন এমন প্রশ্নের জবাবে রোজিনা আক্তার বলেন, ‘স্বামী আগেই মারা গেছেন। সন্তানরা বিয়ে করে সংসারি হয়েছে। তাই পরিবারে আমার দায়িত্ব যতখানি তার চেয়ে একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে মানুষের পাশে বেশি থাকা দরকার বলে মনে করি।’
এ পর্যন্ত কাউন্সিলর খোরশেদের দলের সঙ্গে অন্তত ১২১ জনের দাফনে সহযোগিতা করেছেন বলে জানান তিনি।
রোজিনা আক্তার বলেন, ‘প্রতিটি গোসলে নতুন অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। যত দিন করোনা থাকবে, মরদেহের গোসলের কাজ চালিয়ে যাব।’
নারায়ণগঞ্জের করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় নিয়োজিত ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘করোনায় আক্রান্ত হয়ে কোনো নারীর মৃত্যু হলে আমরা রোজিনা আক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করি।’